পৃথিবীর মাটি ধন্য হয়েছিল প্রথম মানব হজরত আদমের (আ.) পুণ্য পদস্পর্শে। কেননা যাঁদের জন্য এ পৃথিবীর সৃষ্টি, সেই মানবজাতির প্রথম পুরুষ ছিলেন হজরত আদম (আ.)। এতদসঙ্গে তিনি ছিলেন প্রত্যাদেশপ্রাপ্ত মহামানবদেরও প্রথম ব্যক্তিত্ব। তারপর থেকে মানব সভ্যতা পরিপূর্ণতার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতি যুগের মানুষই সৃষ্টিকর্তার তরফ থেকে আগত জ্ঞান ও প্রজ্ঞার বাহক কোনো না কোনো একজন প্রত্যাদেশপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্বের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। সে প্রতীক্ষা পূরণের যখন সময় হয়েছে, তখনই আবির্ভাব ঘটেছে এমন কোনো একজন মহাপুরুষের, যিনি সমকালীন সমস্যাপীড়িত মানুষজনকে সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন, তাদের ন্যায় এবং সততার পথে পরিচালিত করেছেন। সৃষ্টিকর্তার তরফ থেকে প্রেরিত এসব বার্তাবাহক মহোত্তম ব্যক্তিই নবী-রাসূল নামে পরিচিত হয়েছেন। এরাই মানবজাতিকে পশুর স্তর থেকে মানুষের স্তরে উন্নীত করেছেন। এরাই মানুষের গৌরবময় সভ্যতা-সংস্কৃতির প্রকৃত স্থপতি। এদের অনুসৃত পথ-পরিক্রমার মধ্য দিয়েই মানবজাতি শান্তি ও সমৃদ্ধির সঠিক পথ প্রাপ্ত হয়েছে। আজ যে কোনো মানবগোষ্ঠীর মধ্যে ভালো বলতে যা কিছু দৃষ্টিগোচর হয়, খবর নিলে দেখা যাবে, তা কোনো না কোনো নবী-রাসূলের পবিত্র শিক্ষারই উত্তরাধিকার ছাড়া আর কিছু নয়।
আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত নবী-রাসূলদের এ ধারাবাহিকতাকে চূড়ান্ত পরিপূর্ণতা দান করেছেন মহানবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাঁর আগে নবুওতের মশালবাহী হজরত ঈসার (আ.) স্বল্পস্থায়ী নবুওতি জীবন অবসানের সাড়ে পাঁচশ’ বছর পর তার মহাআবির্ভাব ছিল দারুণভাবে প্রতীক্ষিত। কারণ হজরত ঈসা (আ.) কর্তৃক প্রচারিত শান্তির বাণী ভুলে তার অনুসারী হওয়ার দাবিদাররা বিপন্ন করে তুলেছিল সমগ্র মানবীয় মূল্যবোধকে। দুনিয়ার অন্য ধর্মমত অনুসারীদের মধ্যেও প্রত্যাদেশযোগে প্রাপ্ত দীনের শুধু কংকালটুকুই অবশিষ্ট ছিল। ফলে দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার ছিল নিত্যকার ঘটনা।
শোষিত-নির্যাতিত মানুষের ফরিয়াদ যখন আকাশ-বাতাস আন্দোলিত করে তুলল, সৃষ্টিকর্তা তাঁর বান্দাদের প্রতি তখনই বুঝি সদয় হলেন!
মানব সভ্যতাকে পূর্ণ পরিণত রূপ প্রদান করে দুনিয়ার বুকে তাঁর খেলাফতের পূর্ণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই আল্লাহপাক প্রেরণ করলেন সমগ্র বিশ্বমানবের গৌরবনিধি সর্বকালের প্রতীক্ষিত সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মুহাম্মদ মোস্তফা আহমদ মুজতবাকে (সা.)। হাদিস এবং সীরাত তত্ত্ববিদদের এক বিরাট অংশের মতে সে দিনটি ছিল ইয়ামানের দুরাচারী শাসনকর্তা আবরাহা কর্তৃক কাবা শরীফে হামলা পরিচালনা এবং আল্লাহ তা’আলার আজাবে পড়ে ধ্বংস হওয়ার পঞ্চান্ন দিন পর রবিউল আউয়াল মাসের বারো তারিখ মোতাবেক ঈসায়ী ৫৭০ সনের একুশে এপ্রিল সোমবার। (যুরকানী)
প্রাথমিক যুগে রচিত সর্বাধিক প্রসিদ্ধ সীরাত গ্রš’সমূহের অন্যতম সীরাতে-ইবনে-হিশামে লিখিত হয়েছে, মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক মুত্তালেবী বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহর (সা.) জন্ম হস্তিবাহিনী কর্তৃক পবিত্র কাবা অভিযানের বছর রবিউল আউয়াল মাসের বারো তারিখ সোমবার প্রত্যুষে হয়েছে। আল-মুত্তালিব ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে কায়স ইবনে মাখরামা তার পিতার বক্তব্য বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমার পিতা মাখরামা বলেছেন, আমার এবং রাসূলুল্লাহর (সা.) জন্ম হস্তিবাহিনী কর্তৃক পবিত্র কাবা অভিযানের বছর হয়েছে। আমরা উভয়েই সমবয়সী।
পবিত্র আবির্ভাব মুহূর্তের এ দিন-তারিখ সম্পর্কে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। যেমন আল্লামা কুতুবুদ্দীন কুসতুলানী সাহাবী হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) এবং জুবাইর ইবনে মুতএম (রা.)-এর বর্ণনা উদ্ধৃত করে বলেন যে, ‘দিনটি ছিল আটই রবিউল আউয়াল সোমবার এবং তিনি ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন হজরত আবদুল মোত্তালিবের ঘরে।’
অন্যদিকে সাম্প্রতিককালের বিশিষ্ট সীরাত গ্রš’ ‘রাহমাতুললিল আলামীন’ রচয়িতা কাজী মুহাম্মদ সুলায়মান সালমান মনসুরপুরী লিখেছেন, ‘বসন্তকালে আবরাহার হস্তিবাহিনী কর্তৃক পবিত্র কাবা অভিযানের বছর ৯ রবিউল আউয়াল মোতাবেক ২২ এপ্রিল ৫৭১ ঈসায়ী সনে সুবহে সাদেক ও সূর্য উদয়ের মাঝামাঝি সময়ে রাসূলে মকবুল (সা.) দুনিয়ায় আগমন করেন। তদানীন্তন যুগে আমাদের এ উপমহাদেশে প্রচলিত সন-তারিখ মোতাবেক দিনটি ছিল ৬৮২ বিক্রমী সনের ১ জ্যৈষ্ঠ।’
আল্লামা শিবলী নোমানীও সীরাতুননবী গ্রšে’ মিসরের প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ মাহমুদ পাশা ফালাকী কর্তৃক প্রদত্ত হিসাবের আলোকে ৯ রবিউল আউয়াল তারিখটিকে নির্ভুল বলে মন্তব্য করেছেন। (সীরাতুন্নবী, ১ম খণ্ড)
কাজী সুলায়মান সালমান আরো লিখেছেন : ‘সোমবার দিনটি রাসূলুল্লাহর (সা.) জীবনে বিশেষ তাৎপর্যবহ ছিল বলে মনে হয়। কারণ তিনি ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন সোমবার, নবুওত লাভ করেছিলেন সোমবার, হিজরত করেছিলেন সোমবার, মদিনায় গিয়ে পৌঁছেছিলেন সোমবার এবং তাঁর তিরোধানও হয়েছিল সোমবার।’
ইবনে-ইসহাক বিশুদ্ধ সনদের মাধ্যমে সাহাবী কবি হজরত হাস্সান ইবনে সাবেত (রা.)-এর এরূপ একটি বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন যে, হাস্সান বলেন : আমার বয়স তখন অনুমান সাত-আট বছর হবে। কোনো কিছু দেখলে বা শুনলে তা বোঝার বা স্মরণ রাখার মতো বয়স হয়েছে। একদিন দেখতে পেলাম সকাল বেলায় এক ইহুদি গণৎকার লোকালয়ের বাইরে একটা টিলার উপর দাঁড়িয়ে উচ্চৈঃস্বরে লোকজনকে ডাকাডাকি করছে। কিছু লোক তার চিৎকার শুনে এসে সমবেত হলো। তারা ওকে লক্ষ্য করে বলল : হতভাগা! সকাল বেলায় এমন চিৎকার জুড়ে দিলে কেন
সে বলতে লাগল : ‘হে ইহুদি সম্প্রদায়, তোমাদের সৌভাগ্যশশি বুঝি অস্তমিত হলো। আজ রাতে আমি আকাশের বুকে ‘আহমদ’-এর সেতারার উদয় প্রত্যক্ষ করেছি। এতে প্রমাণ হচ্ছে যে, প্রতীক্ষিত সেই মহামানব দুনিয়াতে চলে এসেছেন।’
সাহাবী হজরত ইরবাজ ইবনে সারিয়া (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় তাঁর মাতা আমেনা এমন এক নূরের ঝলকানি প্রত্যক্ষ করেছিলেন যা দ্বারা সুদূর শামদেশের বুসরা পর্যন্ত আলোকিত হয়ে উঠেছিল। (মাসনাদে আহমদ, মুসতাদরাক হাকেম)
সাহাবী হজরত উসমান ইবনে আবুল আস-এর মাতা ফাতেমা বিনতে আবদুল্লাহ বর্ণনা করেন : রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন ভূমিষ্ঠ হন, তখন আমি তাঁর মাতা আমেনার কাছে উপস্থিত ছিলাম। পুরো রাতটিই যেন আমার কাছে অস্বাভাবিক রকম উজ্জ্বল বলে মনে হচ্ছিল। এরূপ অনুভব করছিলাম যে, আকাশের তারাগুলো যেন খুব নিচে নেমে এসেছে। কোনো কোনো সময় আমার এমনও মনে হতো যে, তারাগুলো বোধ হয় আমাদের মাথার উপর এসে পতিত হবে। (ফতহুল-বারী, ৬ষ্ঠ খণ্ড)
এসব ঘটনার দ্বারা আল্লাহপাক জগত্বাসীকে এ মর্মে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন যে, খুব নিকট ভবিষ্যতেই নবুওতে-মুহাম্মদীর প্রকাশ ঘটানো হচ্ছে, যা দ্বারা সত্য সত্যই সমগ্র দুনিয়া আলোকোজ্জ্বল হয়ে উঠবে। এ দিকটির প্রতি ইঙ্গিত করেই পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে : নিশ্চয় তোমাদের কাছে আল্লাহর তরফ থেকে নূর এবং সুস্পষ্ট কিতাব আগমন করেছে। এর দ্বারা তিনি পথ দেখাবেন যারা তাঁর সন্তুষ্টিযুক্ত শান্তির পথ অনুসরণ করে। এসব লোককেই আল্লাহ তা’আলা অনুগ্রহ করে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসবেন। (সিরাতুল মোস্তফা, ১ম খণ্ড)
ইবনে সাইয়েদুন্ নাস রচিত ‘উয়ুনুল-আছার’ নামক গ্রšে’ বর্ণনা করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন ভূমিষ্ঠ হন, ঠিক সেই মুহূর্তে মাদায়েনস্থ পারস্য সম্রাটের প্রাসাদে প্রচণ্ড ভূকম্পন অনুভূত হয় এবং এতে প্রাসাদের চৌদ্দটি চূড়া ভূমিসাৎ হয়ে যায়। মূল পারস্য ভূমিতে অগ্নি উপাসকদের হাজার বছর ধরে প্রজ্বলিত অগ্নিকুণ্ড হঠাৎ করে নিভে যায়। এ সব দেখে এবং ঐতিহ্যবাহী অগ্নিকুণ্ড হঠাৎ নির্বাপিত হয়ে যাওয়ার খবর শুনে পারস্য সম্রাট খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
পরদিন সকাল বেলায় সম্রাট নিতান্ত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় দরবারে প্রবেশ করেন। দরবারীদের সামনে তিনি এ অভাবিতপূর্ব ঘটনা সম্পর্কে আলোচনার সূত্রপাত করেন। আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান রাজ-জ্যোতিষী বলতে শুরু করলেন : ‘আমি গত রাতে স্বপ্নে দেখেছি যে, শক্তদেহী উষ্ট্রপাল বিপুল সংখ্যক আরবি ঘোড়া তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি এসব উট দজলা নদী পাড়ি দিয়ে আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।’
সম্রাট জ্যোতিষীকে জিজ্ঞেস করলেন, এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী হতে পারে
জ্যোতিষী জবাব দিলেন, ‘আমার মনে হয়, আরবে কোনো বিপ্লবাত্মক ঘটনা সংঘটিত হতে যাচ্ছে।’
স্বপ্নের ব্যাখ্যা শুনে সম্রাট আরো বেশি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লেন। আরব ভূমিতে সত্য সত্যই কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে কিনা, তা জানার জন্য তিনি তার এক আরব সামন্ত নোমান ইবনে মানযারের কাছে এ মর্মে নির্দেশ প্রেরণ করলেন যেন অনতিবিলম্বে একজন আরব জ্যোতিষীকে দরবারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। নির্দেশ মোতাবেক নোমান আবদুল মসীহ নামক একজন বিজ্ঞ গণৎকারকে প্রেরণ করলেন।
আবদুল মসীহ সম্রাটের বক্তব্য শুনে নিবেদন করলেন, এ ব্যাপারে আমাকে সাতীহ্ নামক এক প্রবীণ বিজ্ঞ ব্যক্তির সঙ্গে পরামর্শ করতে দিন। সম্রাটের অনুমতি নিয়ে আবদুল মসীহ যখন সাতীহ্র আস্তানায় উপনীত হলেন, তখন তার শেষ অবস্থা। আবদুল মসীহর মুখে সব বৃত্তান্ত শুনে সাতীহ্ ক্ষীণকণ্ঠে বলতে লাগলেন, ‘শোন বৎস, আল্লাহর কালাম ব্যাপকভাবে পঠিত হতে থাকবে। যষ্টিধারী এক জ্যোতির্ময় মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটবে। তখন অবশ্যই শ্বেত দরিয়া শুকিয়ে যাবে। পারস্যের ঐতিহ্যবাহী অগ্নিকুণ্ড নির্বাপিত হয়ে যাবে। প্রাসাদের যে ক’টি চূড়া ধসে পড়েছে, বর্তমান সাশান বংশের ঠিক সে ক’জন নারী-পুরুষ পর পর সিংহাসনে আরোহণের পর পারস্য সাম্রাজ্য চূড়ান্তভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যাবে। যাঁর প্রভাবে এরূপ অকল্পনীয় ব্যাপার ঘটবে, মনে হয় তিনি এসে গেছেন।
আবদুল মসীহর মাধ্যমে প্রাজ্ঞ সন্ন্যাসী সাতীহ্র এ ব্যাখ্যা শ্রবণ করে মহাপরাক্রান্ত পারস্য সম্রাট মন্তব্য করলেন, পর পর চৌদ্দ পুরুষের বাদশাহী সমাপ্ত হবে! সে অনেক কাল দূরের ব্যাপার।’ (খাসায়েসুল-কুবরা : সিয়ূতী)
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, রাসূলুল্লাহর (সা.) আবির্ভাব মুহূর্তের পর থেকে পর পর চৌদ্দজন সম্রাট রাজত্ব করার পর তৃতীয় খলিফা হজরত ওসমানের (রা.) আমলদারীতেই পারস্যের বিশাল সাশানী সাম্রাজ্যের চির সমাপ্তি ঘটে যায়। অপর দিকে পারস্য ভূমিতে হাজার বছর ধরে যে অগ্নিশিখা প্রজ্বলিত ছিল, সেটিও উষ্ট্রারোহী মুসলিম বাহিনীর দ্বারা চিরদিনের জন্য নির্বাপিত হয়ে যায়।
রাসূলুল্লাহর (সা.) পিতৃব্য হজরত আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর অন্যান্য শিশুর মতো নবী করিমের (সা.) নাড়ি কাটার প্রয়োজন করেনি। তিনি নাড়ি কাটা এবং খতনাকৃত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়েছেন। আবদুল মুত্তালিব এটা লক্ষ্য করে আশ্চর্যান্বিত হয়েছিলেন এবং মন্তব্য করেছিলেন যে, মনে হয় আমার এ পৌত্র অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী হবে। কালে অবশ্য তাই হয়েছিল। (তবকাতে ইবনে-সা’আদ, ১ম খণ্ড)
হাফেজ আবুল ফজল ইবনে হাজার বর্ণনা করেন, ‘নবী করিম ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর পরই কথা বলেছেন।’ ইবনে সাব’আ ‘আল্-খাসায়েস কিতাবে বর্ণনা করেন যে, ‘ফেরেশতারা দোলনা দোলাচ্ছিল এবং তাঁর কচি মুখ থেকে উচ্চারিত হচ্ছিল ‘আল্লাহু, আকবার কাবীরা, ওয়াল-হামদুলিল্লাহে কাসীরা, সুবাহানাল্লাহে বুকরাতাও ওয়া আসীলা।’ (খাসায়েসুল-কোবরা, ১ম খণ্ড)
রাহমাতুললিল আলামিন মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাব মানব ইতিহাসের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যার সঙ্গে অন্য কোনো ঘটনাই তুলনা করা যায় না। কেননা তাঁর আবির্ভাবের বরকতেই সৃষ্টিজগৎ লাভ করেছে ‘রাব্বুল আলামিনের সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত।’ তিনিই তো বয়ে এনেছেন কুল মাখলুকাতের জন্য সর্বাপেক্ষা বড় কল্যাণধারা।
জনৈক পাশ্চাত্য লেখকের ভাষায়: যুগ যুগ ধরেই সমগ্র সৃষ্টিজগৎ যেন উন্মুখ হয়ে অপেক্ষমাণ ছিল তাঁর শুভ আবির্ভাবের মুহূর্তটির জন্য। কারণ জ্ঞান-বিজ্ঞান, কৃষ্টি-কালচার এবং মানবতার যে জয়গানে আজ চারদিক মুখরিত এ সবকিছুরই তো সূচনা ৬ষ্ঠ শতকের পর থেকে। অর্থাৎ যখন তিনি এলেন, তখন থেকেই যেন সবকিছুর বদ্ধ দুয়ার খুলে গেল। মানুষের অগ্রযাত্রা যেন দুর্বার হয়ে উঠল (লাইফ অব মুহাম্মদ)।
হ্যাঁ, তাঁর অপেক্ষাতেই তো যুগের পর যুগ ধরে মাটির এ পৃথিবীকে অপরূপ সৌন্দর্যে সাজানো হচ্ছিল। তাঁর আগমনী গান শোনানোর জন্যই তো পাখির কণ্ঠে দেয়া হয়েছিল সুমধুর সুর। তাঁর আগমন সংবাদ চারদিকে ছড়িয়ে দেয়ার জন্যই তো কুসুমের বুকে দেয়া হয়েছিল মন মাতানো সুবাসের বাহার। তাঁর পবিত্র চরণধূলি গ্রহণ করার জন্যই তো বিশ্ব-প্রকৃতি সৃষ্টি করে রেখেছে এমন মায়াময় পরিবেশ।
তাই, তাঁর আগমন বিশ্বমানবের জন্য সর্বাপেক্ষা বড় উৎসব। সর্বাপেক্ষা তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!
লেখক : সম্পাদক, মাসিক মদীন
লেখক : সম্পাদক, মাসিক মদীন
0 comments:
Post a Comment