ঋতু পরিবর্তনজনিত সমস্যায় সচেতনতা

নিউজ ডেস্ক:- সময়টা এখন ঋতু পরিবর্তনের। মানে শীত আসছে আসছে ভাব এমন একটা অবস্থা বিরাজ করছে এখন। এ সময়টাতে কখনো গরম লাগে, আবার কখনো শীত লাগে। সবচেয়ে অস্বস্তিকর যন্ত্রণায় পড়তে হয় এ সময়ের চাপা বা ভ্যাপসা গরমের কারণে। এসময় আমরা যেসব শারীরিক সমস্যায় ভুগি সেসব বিষয়ে আগে থেকেই একটু সচেতন হলে অনেকটাই নিরাপদ থাকতে পারি। আসুন এসব বিষয়গুলো আমরা জেনে নিই।

ঠাণ্ডার সমস্যা
দেশজুড়ে আমরা এখন কমবেশি অনেকেই ঠাণ্ডাজ্বর, কাশিতেভুগি। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা একটু বেশি। তারা কাশিতে ভোগে বেশি। কাশি হওয়া মানেই যে গুরুতর অসুস্থ, তা নয়। আবার সচেতন থাকাও জরুরি। সুস্থ-স্বাভাবিক শিশু ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হলে কাশি হতে পারে। দিনে এক থেকে ৩০ বার পর্যন্ত শিশু কাশতে পারে। চলতে পারে সপ্তাহ দুয়েক। তবে রাতে ঘুমের মাঝে কাশি হলে ধরতে হবে অস্বাভাবিক কাশি। তখন চিকিৎসকের পরামর্শ দরকার।
ভাইরাল কাশি, জ্বর
হঠাৎ এক-দুই সপ্তাহের কাশিকে বলি একিউট কাশি; মূলত ভাইরাল। এগুলো সাধারণ প্রি-স্কুল শিশুদের বেশি হয়। বাতাসে ঠাণ্ডা হাওয়ায় ভাইরাস ঢুকে পড়ে চট করে। গরম পানিতে মধু আর তুলসি পাতা মিশিয়ে খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠলে যেন ঠাণ্ডা না লাগে। হালকা গরম কাপড় গায়ে পরাতে হবে।
দীর্ঘস্থায়ী কাশি
হাঁপানি বা অ্যাজমায় আক্রান্ত হলে বিশেষ ধরনের শব্দযুক্ত কাশি হতে পারে। এটা থাকবে কয়েক সপ্তাহ। অন্ততমাস খানেক ভোগাবে। খেলাধুলা, ধূলাবালি ও ঠাণ্ডা বাতাস হাঁপানিজনিত কাশিকে উসকে দেয়। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ইনহেলার ও মুখে খাওয়ার ওষুধ দিতে হবে।
নাক সাইনাসের সমস্যা
নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া ও সাইনাসের সমস্যা এই সময়ে খুবই ঘন ঘন হয়। অ্যালার্জিক রাইনাইটিস হলে সারাক্ষণ নাক দিয়ে পানি-সর্দি ঝরবে; সঙ্গে কাশিও। এর জন্য বয়সভেদে সাইনাসের এক্স-রে দরকার হতে পারে। নাকে গরম পানিতে বাষ্প টানলে, একটু ম্যানথোল মিশিয়ে নিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
পাকস্থলি খাদ্যনালির অসুখ
খাবার খাচ্ছি। যাচ্ছে কোথায়? খাদ্যনালি দিয়ে পাকস্থলিতে। ঠিকঠাক নাথাকলে, যে হারে খাদ্যে ভেজাল,পাকস্থলি সইবে কী করে। বুকজ্বালা, এসিডিটি, সংক্রমণ—সবই ভোগায়। শিশুদের এ ধরনের সমস্যা থেকে হতে পারে গ্যাস্ট্রো-ইসেফেজিয়াল রিফ্লাক্স। গলার স্বর বসে যায়, কর্কশ হয়ে যায়। উসকে দেয় দীর্ঘমেয়াদি কাশি। ঢেঁকুর তোলা বা খাবার গিলতে অসুবিধার কারণে শিশুদের কাশির উদ্রেক হতে পারে খুব।
ভাইরাস থেকে জ্বর, সর্দি, কাশি -একসঙ্গে
ভাইরাল সংক্রমণ হলে শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ হয়। অ্যালার্জি থেকেও হয়। ঋতু পরিবর্তনের কারণে এমনিতেই বতাসে ধূলিকণা বেড়ে যায়, বাড়ে ভাইরাসও। শিশু-কিশোর ও সদ্য তরুণদের মধ্যে প্রবণতা বেশি। কারণ, স্বাভাবিকভাবেই স্বভাবে বেপরোয়া এরা। জ্বর হলে পর্যাপ্ত পানি, সঙ্গে শুধু প্যারাসিটামল। সর্দির জন্য ঠান্ডা পানি, ঠাণ্ডা বাতাস ও ধুলা পরিহার করা জরুরি। কাশির ধরন বুঝে কফ-সিরাপ, গরম পানিতে মধু বা লেবু আর সম্ভব হলে তুলসি পাতার রস।
জ্বর যদি ১০২ ডিগ্রির বেশি হয়, তাহলে পানিতে কাপড় ভিজিয়ে গা মুছেদেওয়া। শ্বাস-প্রশ্বাস ঘন ঘন হলে, বুক দেবে গেলে নিউমোনিয়া হতে পারে, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। নিজে নিজেই ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ; বড়দের জন্য, শিশুদের জন্যও। হিতে বিপরীত হতে পারে। কজেই ঋতু পরিবর্তনকে মাথায় রেখে রোগ প্রতিরোধে সচেতন হওয়াটাই জরুরি।
চোখ ওঠা
এ সময়টাতে চোখ লালহয়ে যাওয়া রোগ—কনজাংকটিভাইটিস হতে পারে। দুই চোখ লালদেখাবে, পানি ঝরবে। পরিষ্কার কাপড় অথবা একবার ব্যবহার্য টিস্যু পেপারদিয়ে চোখ পরিষ্কার করবেন। দুই চোখে ক্লোরামফেনিকল ড্রপ দুই ফোঁটা করেদেবে; পাঁচ-ছয়বার দিলেই সেরে যাবে।
হতে পারে জলবসন্তও
এই সময়ে আরেকটি অস্বস্তিকর রোগ হতে পারে। এটিও ভাইরাস। জলবসন্ত। প্রথমেএকটু জ্বর-সর্দি। তারপর ধীরে ধীরে গায়ে ছোট ছোট দানা। অস্বস্তিকর। চুলকানি; ঢোক গিলতে অসুবিধা। টিকা আছে। জীবনে একবার হয়ে থাকলে আর হওয়ার আশঙ্কা নেই। গায়ে ব্যথা থাকতে পারে। শিশু-কিশোরদের হলে স্কুলে যাওয়া বন্ধকরতে হবে। জ্বর হওয়ার সময়ই রোগটি ছড়ায়। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল আরসংক্রমণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন।
কী করবেন
বই ঘাঁটতে গিয়ে নাক ঢেকে ধুলা পরিহার করুন। বাইরে বেরোবেন, খেয়াল রাখুন আবহাওয়ার। সে অনুযায়ী গরম কাপড় নিন।ঠান্ডা শীতেও লাগে, গরমেও লাগে।অতিরিক্ত কাপড়ে ঘেমে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে বাচ্চাদের।
ঢাকার বাইরে ঠাণ্ডাবেশি, বেশি বাতাসও। ঠাণ্ডা বাতাস এড়িয়ে চলুন। পানি পান করুন, অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশি। বাচ্চারা তো খেলবেই, খেলাধুলার সময় যাতে ধূলি-বাতাস আরধোঁয়া, সিগারেটেরও হতে পারে, যাতে আক্রান্ত না করে খেয়াল রাখুন।
জ্বর যদি তিন দিনের বেশি থাকে, কাশি যদি দুই সপ্তাহের বেশিহয়, সর্দিযদি না-ই সারে, তবে নিজে নিজেই কোনো অ্যান্টিবায়োটিক শুরু না করে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তরল-গরম-টাটকা খাবার সব সময়ই ভালো।
এ সময়ে একটু বেশি ভালো ছোটদের জন্য গরম জলে মধু আর বড়রা গরম লেবু-চা। খুব তাজা রাখবে। শ্বাস নিন বুকভরে, যতটা বিশুদ্ধ অক্সিজেন পাওয়া যায় ততটাই সুস্থতা। ঋতু পরিবর্তন, জলবায়ু পরিবর্তন—এসব নিয়েই তো থাকতে হবে। থাকুন সুস্থ, ভালোভাবে বাঁচুন, হাসিখুশি শিশুদের নিয়ে।
Share on Google Plus

About BDtop-news24.co

    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment