পাসওয়ার্ড চুরির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের এক কোটি ৯৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে হ্যাকাররা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলম এ তথ্য প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ২০১৩ সালের মাঝামাঝি রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের সার্ভার হ্যাক করে আড়াই লাখ ডলার (১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা) লুট করে হ্যাকাররা। হল-মার্ক কেলেঙ্কারির পরই অভিনব এই জালিয়াতির ঘটনা ঘটে ব্যাংকটিতে। গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের ‘বার্ষিক সম্মেলন ২০১৪’তে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সচিব বর্তমানে ব্যাংকটির অনলাইন নিরাপত্তাও হুমকিতে বলে জানান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি ব্যাংক সেবার মান বৃদ্ধি, সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা ও সকলের আস্থা ও বিশ্বাস বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এছাড়া, ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দিতে হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. এএইচএম হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত, পরিচালনা পর্ষদের অন্য সদস্যসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এম আসলাম বলেন, গত বছরের মাঝামাঝি সময় হ্যাকাররা আড়াই লাখ ডলার নিয়ে গেছে। এটা ব্যাংকের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। দেশের ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা ঝুঁকি প্রসঙ্গে ড. এম আসলাম আলম আরও বলেন, সমপ্রতি সোনালী ব্যাংকের কিশোরগঞ্জ শাখার ১৬ কোটি টাকার বেশি লুটের ঘটনার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে শাখাগুলো ব্যাংকিং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা গাইড লাইন পরিপালন করছে না। ওই শাখাটি অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে থাকলেও আগে থেকেই কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তাই এসব ঝুঁকিপূর্ণ শাখাকে চিহ্নিত করতে পারলে আগে থেকে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হতো। এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখায় সিসি ক্যামেরা ঠিকমতো কাজ করে না। এটা ব্যাংকের জন্য বড় ঝুঁকি। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পরিপালনে জোর দেয়ার নির্দেশ দেন তিনি।সচিব বলেন, ক্রান্তিলগ্নে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্ব নিয়ে ব্যাংকের সব সূচক ইতিবাচক ধারায় নিয়ে এসেছে। গত বছরে এই সাফল্য অর্জন করতে না পারলে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়তো সোনালী ব্যাংক। গত বছরে সোনালী ব্যাংক শ্রেণীকৃত (খেলাপি) ঋণ আদায়ে বেশ সাফল্য অর্জন করেছে। আমানত অনেক বেড়েছে। কিন্তু এটা প্রশ্নবিদ্ধ অগ্রগতি। কারণ আমানত সংগ্রহের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি অনেক কম। বিনিয়োগ করতে না পারলে অলস আমানত ব্যাংকের ক্ষতি করে। তাই আমানতের সঠিক ব্যবহার করতে হবে।
অর্থমন্ত্রী ড. মুহিত বলেন, ২০১২ সালে হল-মার্কের জালিয়াতি সোনালী ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার কারণে ঘটেছে। তিনি বলেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যেসব জাল-জালিয়াতির ঘটনা ঘটে তার মূলে থাকে অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দুর্বলতা। হল-মার্কের কেলেঙ্কারিও ঘটেছিল অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণের দুর্বলতার জন্য। এইসব জালিয়াতি রোধে সব ব্যাংকগুলোকে অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদারের নির্দেশ দেন মন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকের যে অলস সম্পদ রয়েছে তা ব্যবহার করে ব্যবসা বাড়াতে হবে। ব্যাংকগুলোকে জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠান হতে হবে। ব্যাংকের পরিবেশ যেন সুন্দর ও সুস্থ হয়। সকলের আস্থা, সকলের বিশ্বাস নিয়ে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, এখন ব্যাংকিংয়ের জন্য ব্যাংকে যেতে হয় না। অনলাইনেই সব কাজ হয়ে যায়। তবে এ কাজ করতে গিয়ে গ্রাহককে যেন প্রযুক্তিগত হয়রানির শিকার না হতে হয় সে বিষয়েও খেয়াল রাখার আহ্বান জানান তিনি।
পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এম হাবিবুর রহমান বলেন, ২০১২ সাল সোনালী ব্যাংক ছিল হল-মার্কসহ বিভিন্ন কারণে বিপাকের বছর। গত বছর ছিল সঙ্কট উত্তরণের বছর। আর চলতি বছরকে ঘোষণা করা হয়েছে ব্যবসা উন্নয়ন বছর। নীতিগত ও কৌশলগত পদ্ধতি নেয়া হয়েছে। ঋণ বিতরণ বাড়াতে সম্ভাবনাময় গ্রাহকের দুয়ারে যেতে হবে ব্যাংক কর্মকর্তাদের। যারা অন্য ব্যাংকে চলে গেছেন হল-মার্ক ঘটনার পর তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত বলেন, ২০১২ সালে সোনালী ব্যাংকের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক ছিল। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা ধার করে চলতে হয়েছে। হলমার্ক ঘটনার পর পরিকল্পনামাফিক গত বছরে ঋণ আদায় বছর ঘোষণা করায় ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। ২০১২ সালের তুলনায় গত বছরে খেলাপি ঋণ আদায় বেড়েছে ৪৩২৯ দশমিক ৬৬ কোটি টাকা। আদায়ের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ৫১১ শতাংশ। এরমধ্যে শীর্ষ ২০ খেলাপি ঋণীর কাছেই আদায় হয়েছে ১৩১৭ দশমিক ৪১ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৪ দশমিক ৮৭ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে আদায় বেড়েছে ১৩১২ দশমিক ৫৪ কোটি টাকা বা ২৭০ গুণ বেশি। যা সোনালী ব্যাংকের ইতিহাসে এটি রেকর্ড। এছাড়া, ১ বছরে খেলাপি ঋণের পরিমাণও কমেছে ২৯৫৮ দশমিক ৭৬ কোটি টাকা। আগের বছরে ১২ হাজার ৫৯৭ দশমিক ৫৩ কোটি টাকার জায়গায় বিদায়ী বছরে খেলাপি ঋণ কমে হয়েছে ৯৬৩৮ দশমিক ৭৭ কোটি টাকা। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন নীতি গ্রহণের ফলে গত বছরে লোকসানি শাখা কমেছে। ২০১২ সালে ৫৩টি লোকসানি শাখা থাকলেও গত বছরে কমে হয়েছে ৪৭টি শাখা।
0 comments:
Post a Comment